পুঁজিবাজারে তালিকাভুক্ত মেঘনা সিমেন্ট পিএলসি মারাত্মক আর্থিক সংকটে পড়েছে। ঋণ খেলাপির কারণে কোম্পানিটি লেটার অব ক্রেডিট (এলসি) খুলতে পারছে না। ফলে বন্ধ হয়ে গেছে কাঁচামাল আমদানি, থেমে গেছে নিজস্ব সিমেন্ট উৎপাদন। টানা দুই বছর লোকসানে থাকা কোম্পানির সর্বশেষ হিসাব বছরে ক্ষতির পরিমাণ বেড়েছে পাঁচ গুণ।
ভবিষ্যতে কোম্পানিটি ব্যবসা স্বাভাবিকভাবে চালিয়ে যেতে পারবে কি না—তা নিয়েও শঙ্কা প্রকাশ করেছে নিরীক্ষক। ঢাকা স্টক এক্সচেঞ্জে (ডিএসই) পাঠানো ২০২৪–২৫ অর্থবছরের নিরীক্ষিত আর্থিক প্রতিবেদনে এসব তথ্য উঠে এসেছে। নিরীক্ষকের প্রতিবেদনে বলা হয়, ২০২৪–২৫ অর্থবছরে কোম্পানির বিক্রি প্রায় সম্পূর্ণভাবে ধসে পড়ে। আগের অর্থবছরে যেখানে ১৮৬ কোটি ৯০ লাখ টাকার পণ্য বিক্রি হয়েছিল, সেখানে চলতি প্রতিবেদন বছরের বিক্রি মাত্র ২৭ কোটি ৫০ লাখ টাকা।
ঋণ পরিশোধে ব্যর্থ হওয়ায় কোম্পানিটি খেলাপি তালিকাভুক্ত হয়েছে। এর ফলে কাঁচামাল আমদানির জন্য এলসি খোলা সম্ভব হচ্ছে না। কাঁচামালের অভাবে নিজস্ব উৎপাদন বন্ধ হয়ে গেলেও কারখানায় অন্য কোম্পানির পণ্য উৎপাদনের মাধ্যমে সীমিতভাবে কার্যক্রম চালু রাখা হয়েছে বলে উল্লেখ করেছে নিরীক্ষক। কোম্পানির কার্যক্রম বহাল রাখার সক্ষমতা নিয়ে তাই ‘গোয়িং কনসার্ন’–সংক্রান্ত গুরুতর সন্দেহ রয়েছে।
আর্থিক প্রতিবেদনে দেখা যায়, ২০২৪–২৫ অর্থবছরে মেঘনা সিমেন্ট শেয়ারপ্রতি ৩৬ টাকা ৫৮ পয়সা লোকসান করেছে; মোট নিট লোকসান ১১৫ কোটি ৫৫ লাখ টাকা। আগের বছর লোকসান ছিল শেয়ারপ্রতি ৭ টাকা ১৬ পয়সা, মোট ২২ কোটি ৬১ লাখ টাকা। অর্থাৎ এক বছরে লোকসান বেড়েছে ৯২ কোটি ৯৪ লাখ টাকা—৪১১ শতাংশ বা ৫ দশমিক ১১ গুণ। টানা লোকসানের কারণে কোম্পানি পরপর দুই বছর কোনো লভ্যাংশ দেয়নি। ২০২২–২৩ অর্থবছরে সর্বশেষ ৫ শতাংশ নগদ ও ৫ শতাংশ স্টক লভ্যাংশ দিয়েছিল প্রতিষ্ঠানটি। এদিকে, চলতি ২০২৫–২৬ অর্থবছরের প্রথম তিন মাসেই (জুলাই–সেপ্টেম্বর) কোম্পানি আবারও বড় ধরনের লোকসানে পড়ে। শেয়ারপ্রতি লোকসান ২১ টাকা ৯০ পয়সা হারে মোট লোকসান হয় ৬৯ কোটি ১৮ লাখ টাকা। হিসাব অনুযায়ী, গত ২৭ মাসে (২০২৩–২৪, ২০২৪–২৫ এবং ২০২৫–২৬ প্রথম প্রান্তিক) মোট লোকসান দাঁড়িয়েছে ২০৭ কোটি ৩৪ লাখ টাকা।
নিরীক্ষকের মতে, অব্যাহত লোকসানের কারণে কোম্পানির রিজার্ভ দ্রুতই ক্ষয় হচ্ছে। বর্তমানে রিজার্ভে রয়েছে মাত্র ৮৭ কোটি ৩৩ লাখ টাকা। এ প্রবণতা চলতে থাকলে রিজার্ভ শিগগিরই ঋণাত্মক হয়ে যেতে পারে। ১৯৯৭ সালে পুঁজিবাজারে তালিকাভুক্ত মেঘনা সিমেন্টের পরিশোধিত মূলধন ৩১ কোটি ৫৯ লাখ টাকা। মোট শেয়ারসংখ্যা প্রায় ৩ কোটি ১৬ লাখ। এর মধ্যে সাধারণ ও প্রাতিষ্ঠানিক বিনিয়োগকারীদের হাতে ৫৮ দশমিক ১০ শতাংশ শেয়ার। ফলে কোম্পানির আর্থিক সংকটের প্রভাব সবচেয়ে বেশি পড়বে শেয়ারবাজারের বিনিয়োগকারীদের ওপরই।
আরএস
এলসি মেঘনা সিমেন্ট
কোন মন্তব্য নেই। প্রথম মন্তব্য করুন!