মেডিকো চিরুরগো
আন্তোনিও স্পানিওলো (Antonio Spagnuolo) নাপলি, ইতালিতে অবস্থানরত একজন চিকিৎসক (মেডিকো চিরুরগো)। যদিও তিনি চিকিৎসাবিজ্ঞানের ক্ষেত্রে সক্রিয়, তার সাহিত্যিক কর্মকা-ও সমান প্রভাবশালী। স্পানিওলো বহু সাহিত্যিক জার্নালের পরিচালক এবং বহু কবিতা ও গল্পের বই প্রকাশ করেছেন, যা প্রতিনিয়ত পুরস্কৃত হয়েছে। তার কাব্য ও গদ্য সাহিত্য ইতালিয়ান সাহিত্যের একটি গুরুত্বপূর্ণ অংশ হিসেবে বিবেচিত, এবং তাকে “Letteratura italiana” গ্রন্থের অন্তর্ভুক্তি দেওয়া হয়েছে।
তিনি বিভিন্ন সাংস্কৃতিক পত্রিকায় নিয়মিত অবদান রাখেন এবং La Valle del Tempo প্রকাশনীর জন্য Frontiere della poesia contemporanea কবিতা সিরিজ পরিচালনা করেন। ২০২০ সালে অনুষ্ঠিত “LÕassedio della poesia” পুরস্কারের জুরি সভাপতির দায়িত্বও পালন করেছেন। তার লেখা বিভিন্ন ভাষায় অনূদিত হয়েছে, যা আন্তর্জাতিক সাহিত্যজগতেও তার সুনাম বাড়িয়েছে।
স্পানিওলো-এর সাহিত্যিক শক্তি মূলত মানবিক অনুভূতি, সামাজিক বাস্তবতা ও আধ্যাত্মিক চিন্তাধারাকে কেন্দ্র করে। তার কবিতাগুলোতে প্রায়শই দেখা যায় যন্ত্রণার, আশা ও আকাক্সক্ষার সূক্ষ্ম মিশ্রণ। যুদ্ধ, ধ্বংস, শোক এবং স্বপ্ন এই সব মানবিক অভিজ্ঞতা তার রচনায় সহজাতভাবে প্রবাহিত হয়। দুটি উল্লেখযোগ্য কবিতা ‘জেরুসালেম’ এবং ‘আখেরোন্ট’ এই বৈশিষ্ট্যগুলোকে বিশেষভাবে প্রকাশ করেছে।
জেরুসালেম
হাওয়া ফিসফিস করে জেরুসালেমের প্রাচীন দেয়ালগুলোর মাঝে,
আর পাথরগুলো ক্লান্ত হয়ে কেঁপে ওঠে
সেই আকাশের নিচে, যা শান্তি চেয়েছিল,
এবং এখন আগুনে ছেঁড়া।
যেখানে একসময় হাতগুলো মিলিয়ে প্রার্থনা করত,
সেখানে এখন উঠে আসে মুষ্টি ও বন্দুক,
রক্ত ঝরানো বিশৃঙ্খল পদক্ষেপের মাঝে।
কে নিভিয়েছে ভোরের আলো,
আর কাদের মৃত্যু হয় সেই গলিপথে যা একসময় পবিত্র ছিল?
তবুও ধূলা আর ধ্বংসাবশেষের মাঝে আছে একটি বীজ,
যা এক শিশুর স্বপ্ন
তার চোখে তারা ঝলমল করে,
আর সে হারা মনে চায় নীরবতা।
ঘায়ে ভরা ও ঐশ্বরিকভাবে ফিরে আসে তোমার প্রার্থনা
কাটা দেহের মাঝে এবং প্রেমের স্মৃতির মাঝে।
‘জেরুসালেম’ কবিতায় স্পানিওলো যুদ্ধ ও ধ্বংসের দৃশ্যকে চিত্রিত করেছেন। কবিতার শুরুতে তিনি প্রাচীন শহর জেরুসালেমের বাতাস ও প্রাচীরের ধ্বংসকে তুলে ধরেছেন হাওয়া ফিসফিস করে, কিন্তু পাথরগুলো ক্লান্ত হয়ে কেঁপে ওঠে। আকাশ শান্তির প্রতীক হলেও, এখন তা আগুনে ছেঁড়া। অতীতের প্রার্থনার স্থানে এখন হিংসা, বন্দুক এবং রক্তপাতের পদচারণা। কবি এখানে কেবল ধ্বংস নয়, বরং মানবিক আশা ও সম্ভাবনার প্রতীকও রেখেছেন। ধূলা ও ধ্বংসাবশেষের মধ্যকার একটি বীজ এবং শিশুর ঝলমল করা চোখ মানুষের আশা, সৌন্দর্য ও নীরবতার আকাক্সক্ষা প্রকাশ করে। শেষের অংশে কেটে যাওয়া দেহ এবং স্মৃতির মাঝে প্রার্থনার পুনরাবির্ভাব আধ্যাত্মিক শক্তি ও প্রেমের চেতনা প্রদর্শন করে। এই কবিতা প্রমাণ করে যে, যদিও ধ্বংস ও হিংসা বিদ্যমান, মানবিকতা ও আশা চিরকাল টিকে থাকে।
আখেরোন্ট
মূর্খ হাতগুলো খেলছে যন্ত্রণার খেলা
এক ভ- ক্রোধের জন্য,
কারণ তুমি সংগ্রহ করছ গুচ্ছফল
আর সুবাস, যেগুলো মনে রাখে না
কোমলতা হাড় ও ছায়ার জন্য
অপ্রত্যাশিত ধূলার মাঝে লুকানো।
( কাব্যাংশ )
এই কাব্যাংশে স্পানিওলো মানুষের ভ-তা ও প্রতারণার প্রতীকী চিত্র তুলে ধরেছেন। “মূর্খ হাতগুলো খেলছে যন্ত্রণার খেলা” কথায় বোঝানো হয়েছে, কিছু মানুষ বা শক্তি আনন্দ, সুখ বা শক্তিকে ব্যবহার করে নিজের স্বার্থের জন্য, যা প্রকৃতভাবে কোনো ইতিবাচক ফলাফল বা ন্যায়বিচার জন্মায় না। এখানে ‘ভ- ক্রোধ’ নির্দেশ করছে অসৎ বা ভ- মানসিকতার উন্মত্ত প্রভাব, যা অন্যের অনুভূতি বা জীবনের ক্ষতি করতে পারে। কবি বলছেন, তুমিÑ প্রতীকী অর্থে ভালোবাসা, সৌন্দর্য বা অনুপ্রেরণা—সংগ্রহ করছ ‘গুচ্ছফল আর সুবাস’, যা প্রকৃত অনুভূতি বা মৃদু স্মৃতি ধরে রাখে না।
অর্থাৎ, বাহ্যিক সৌন্দর্য বা প্রলুব্ধি সংগ্রহ করা হচ্ছে, কিন্তু তার আভ্যন্তরীণ গভীরতা, কোমলতা বা অমূল্য অনুভূতি হারিয়ে যাচ্ছে। ‘অপ্রত্যাশিত ধূলার মাঝে লুকানো’ অংশটি দেখায় যে, এই প্রতারণা বা ভুল প্রভাব কখনো চুপচাপ, অপ্রত্যাশিতভাবে উপস্থিত হয়, যা মানুষের অভ্যন্তরীণ জটিলতা এবং জীবনের অনিশ্চয়তা প্রকাশ করে। এইভাবে, কবি সামাজিক ও মানসিক বাস্তবতার প্রতিফলন এনে মানব অভিজ্ঞতার সূক্ষ্ম দিকগুলোকে উন্মোচন করেছেন।
স্পানিওলো-এর কবিতাগুলোতে আধ্যাত্মিকতা ও নৈতিকতার ছোঁয়াও লক্ষ্য করা যায়। তার রচনায় প্রায়শই দেখা যায় আশা, প্রেম, বিশ্বাস এবং আধ্যাত্মিক অনুসন্ধানকে। যুদ্ধ, ধ্বংস বা যন্ত্রণার মধ্যেও তিনি মানবিক মূল্যবোধকে তুলে ধরেন এবং মনে করান যে মানুষের অনুভূতি, স্বপ্ন এবং নীরব আকাক্সক্ষা চিরকাল টিকে থাকে। এছাড়াও, স্পানিওলো-এর সাহিত্যকর্মগুলো ভাষার সৌন্দর্য ও চিত্রায়ন দ্বারা সমৃদ্ধ। তার কবিতা ভাব প্রকাশের পাশাপাশি, পাঠককে দৃশ্য, স্পর্শ এবং আবেগের সঙ্গে সংযুক্ত করে। কাব্যিক চিত্র, ধ্বনিসম্পন্ন শব্দ, এবং সূক্ষ্ম প্রতীকিকতা পাঠককে গভীরভাবে অনুভব করার সুযোগ দেয়। তার কবিতার ভাষা সরল কিন্তু গভীর, যা প্রতিটি লাইনকে এক ধরনের আধ্যাত্মিক এবং দার্শনিক ছোঁয়া দেয়।
আন্তোনিও স্পানিওলো একজন সাহিত্যিক ও মানবিক অন্তর্দৃষ্টিসম্পন্ন কবি, যিনি তার কবিতার মাধ্যমে জীবন, যন্ত্রণার, আশা ও আধ্যাত্মিকতার সংমিশ্রণ ফুটিয়ে তুলেছেন। ‘জেরুসালেম’ এবং ‘আখেরোন্ট’ কবিতাগুলো তার সাহিত্যিক গভীরতা, মানবিক উপলব্ধি এবং প্রতীকী চিত্রায়নের অসামান্য উদাহরণ। এই কবিতাগুলো পড়ে বোঝা যায় যে, স্পানিওলো-এর রচনায় ধ্বংস ও হিংসার মাঝেও আশা, মানবিকতা এবং প্রেমের শক্তি চিরন্তন।
তথ্যসুত্রঃ আন্তোনিও স্পানিওলো এর ওয়েবসাইট এবং কথোপকথন।
(অও এর সাহায্যে কবিতার অনুবাদ করা হয়েছে)
[কবি আন্তোনিও স্পানিওলোকে আমি রিকোয়েষ্ট পাঠালে তিনি আমাকে মেসেজ দেন, তারপর গুগল ট্রান্সলেশন এর মাধ্যমে আমাদের মাঝে অনেক কথোপকথন হয়। হঠাৎ আমাকে ইমেইল উল্লেখ করে বলে, আমার তিনটি কবিতা এবং একটি ছবি দেওয়ার জন্য। আমি ইমেইল করলে তিনি তা ইতালি ভাষায় নিজের ই ম্যাগাজিন (ব্লগ ওয়েবসাইট)-এ প্রকাশ করেন। পরে আমি আশ্বাস দিই যে তাকে নিয়ে একটি নিবন্ধ লিখবো। তারই এই ক্ষুদ্র প্রচেষ্টা।]
kire vai koi tui
২৯ নভেম্বর ২০২৫, ০৫:০৭ PMkire vai
২৯ নভেম্বর ২০২৫, ০৫:০৭ PM